ঘটনা ১ : একবার এক রিক্সাওয়ালার গর্ভবতী স্ত্রীকে রক্তদান করার জন্য
অফিস ফাঁকি দিয়ে স্ট্যান্ডবাই ডোনার হিসেবে সারাদিন কাটালাম। অবশ্য পরে আর
ব্লাড লাগেনি। এরপরও মাঝে মাঝে লোকটা আমার খোজ খবর নিতেন। উনার বাসায় গিয়ে
একবেলা ডালভাত খাবার জন্য প্রায়ই অনুরোধ করতেন। অবশ্য সময়ের অভাবে আর দেখা
করা হয়নি। লোকটার কৃতজ্ঞতাবোধ আমাকে খুব মুগ্ধ করে।
.
ঘটনা ২ :
একবার একটা ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্প শেষে এক গার্মেন্টস কর্মীর স্ত্রীকে
জরায়ু অপারেশনের জন্য রক্তদান করেছিলাম। লোকটি আমার দেখাদেখি নিজেও বেশ কয়েকবার
রক্তদান করেন। এরপর থেকে এখনও নিয়মিত আমার সাথে যোগাযোগ করে খোজ খবর নেন।
এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজে আমাদের সহযোগীতা করার চেস্টা করেন।
.
ঘটনা ৩ : একবার রমজান মাসে স্কয়ার হাসপাতালে তৎকালীন রাজশাহী সিটি’র
মেয়রের আত্মীয়কে রক্তদান করি। প্রথম দিন গিয়ে ক্রস ম্যাচিং এর জন্য
স্যাম্পল দিয়ে, দ্বিতীয় দিন গিয়ে রক্তদান করি। রোজা থেকে পর পর দুদিন গিয়ে
পরে রক্তদান করতে হয়। কিন্তু রক্তদানের পর আমার আর কোন খোজ রাখেননি। কিন্তু
এরপর অপারেশন হবার সপ্তাহ খানেক পর আমি খোজ নিতে গিয়ে দেখি, আমাকে চিনতে
তাদের খুব কস্ট হয়ে যায়।
.
ঘটনা ৪ : সম্প্রতি ঢাকার এপোলো
হাসপাতালে রাতের ৩টায় গিয়ে এক মুমুর্ষ রোগিকে রক্তদান করি। এরপর রক্তদান
করে রাত ৪টায় বাসায় ফিরি। অবশ্য আমাকে বাসা পর্যন্ত গাড়ি দিয়ে নামিয়ে দিয়ে
যান। কিন্তু এরপর রোগির আর কোন খোজ নিতে পারিনি। খোজ নেয়ার সময় ফোন দেয়ার
পর তাদের ভাবখানা দেখে মনে হলো যেন, আমি কিছু চাওয়ার জন্য ফোন দিসি। রোগির
অবস্থা জেনে রেখে দিলাম। আর কোন যোগাযোগ হয়নি।
.
১ ও ২ নং ঘটনাগুলো
মনে হলে খুব ভাল লাগে। আর ৩ এবং ৪ নাম্বার ঘটনার কথা মনে হলে ভাবি, আসলে
অর্থবিত্ত অনেক সময় মানুষকে অনেক পরিবর্তন করে দেয়। সমাজে মধ্যবিত্ত থেকে
নিন্মবিত্ত লোকেরাই মানবতায় বেশি এগিয়ে আসে। আর বেশিরভাগ উচ্চবিত্তরা শুধু
সেবা করার অভিনয় ই করে যায়। সে কথা চিন্তা করলে গরীব মানুষদের সেবা করতে
পারায় মানসিক তৃপ্তি বেশি। ধনীরা যদি আরেকটু মানবিক হতো, তবে সমাজের অনেক
সমস্যা দ্রুত সমাধান হতো।
আসলে অর্থের দিক দিয়ে অনেকে ধনী হতে পারলেও মনের দিক দিয়ে সবাই ধনী হয় না।